,

দাফনের দেড় বছর পর কবর থেকে গৃহবধূর লাশ উত্তোলন

চাঁদপুর প্রতিনিধি: চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলায় দাফনের প্রায় দেড় বছর পর কবর থেকে মেহজাবিন সুলতানা ইতি মামে এক গৃহবধূর লাশ উত্তোলন করা হয়েছে।

চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জামাল হোসেনের নির্দেশে বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে ১২টার দিকে কবর থেকে ওই গৃহবধূর লাশ উত্তোলন করা হয়।

লাশ উত্তোলনকালে সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সেলিনা আক্তারসহ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া সিআইডির ইন্সপেক্টর মো. আব্দুল মান্নান উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া শাহরাস্তি থানার উপপরিদর্শক এসআই মো. আব্দুল আউয়াল ও গোলাম মোস্তফা লাশ উত্তোলনে সার্বিক সহায়তা প্রদান করেন।

জানা যায়, ২০১৮ সালের ২৩ জুন সন্ধ্যায় স্বামীর বাড়ি শাহরাস্তি উপজেলার মেহের দক্ষিণ ইউনিয়নের মালরা মজুমদার বাড়িতে রহস্যময়ভাবে মৃত্যু হয় ইতির। সে শাহরাস্তি পৌরসভাধীন ঘুঘুশাল গ্রামের আমির হোসেনের মেয়ে। ওই ঘটনায় ২৪ জুন একটি অপমৃত্যুর মামলা রুজু করা হয়। পরবর্তীকালে ২৮ জুন নিহতের ভাই নুরে আলম বাদী হয়ে চারজনকে আসামি করে শাহরাস্তি থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।

একপর্যায়ে মামলা নিয়ে আসামিদের বিভিন্ন মহলে দৌড়ঝাঁপ ও গোপন সমঝোতার আভাস পেলে বাদী মামলাটির বিষয়ে আদালতে আপত্তি জানায়। পরে ওই বছরের ৫ জুলাই মামলাটি জেলা গোয়েন্দা শাখায় (ডিবি) হস্তান্তর করা হয়। এরপর পুলিশ পরিদর্শক ইন্সপেক্টর এম এ রঊফ খান হত্যার বিষয়টি মিথ্যা বলে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।

এ দিকে, ২০১৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি বাদীর অনাস্থার ভিত্তিতে আদালত একই বছরের ২৭ মে চাঁদপুরস্থ সিআইডিকে এই মামলার তদন্তের নির্দেশ দেন। তদন্ত চলাকালে ২৪ আগস্ট সন্ধ্যায় নিজ গ্রাম থেকে ইতির স্বামী ইকরামুল হক রাজুকে শাহরাস্তি থানা পুলিশের সহযোগিতায় আটক করা হয়।

অন্যদিকে গত ৩১ অক্টোবর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আবদুল মান্নান সরকারকে পরিবর্তন করে তদন্তভার পুলিশ পরিদর্শক ইন্সপেক্টর সাইফুল ইসলামকে দেওয়া হয়। এভাবে বারবার মামলার তদন্ত কার্যক্রম পরিবর্তনে বোনের হত্যার সুষ্ঠু বিচার নিয়ে হতাশ হয়ে পড়েন নুরে আলম। একপর্যায়ে শাহরাস্তি-হাজীগঞ্জের গণমানুষের নেতা মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তমের শরণাপন্ন হন তিনি। এ সময় বিষয়টিতে তিনি একটি লিখিত আবেদন করেন। পরবর্তীকালে সংসদ সদস্যের হস্তক্ষেপে গত ১৪ নভেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক ইন্সপেক্টর মো. আবদুল মান্নানকে তদন্তভার দেওয়া হয়।

এরই মধ্যে তদন্ত কর্মকর্তা গত ২৪ নভেম্বর সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মো. কুতুব উদ্দিনের সার্বিক দিক নির্দেশনায় ইকরামুল হক রাজুর রিমান্ড মঞ্জুর এবং কবর থেকে ইতির লাশ উত্তোলনপূর্বক পুনঃ ময়না তদন্তের জন্য বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। পরে আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করলে জিজ্ঞাসাবাদে রাজু ইতিকে হত্যার সম্পূর্ণ ঘটনা খুলে বলে। ওই সময় রাজু চাঁদপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শফিউল আযমের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।

স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে রাজু আদালতকে জানায়, ‘ঘটনার দিন সন্ধ্যায় আমি বাড়িতে এসে ইতির সঙ্গে কথা বলছিলাম। কথা বলার একপর্যায়ে আমার সঙ্গে তার বাকবিতণ্ডা হয়। আমি রাগের বশবর্তী হয়ে তার গলায় চাপ দিলে ইতির শ্বাস বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীকালে দিশেহারা হয়ে কোনো উপায় না দেখে দ্রুত বাড়ি থেকে বের হয়ে তাদের (ইতির) বাড়িতে যাই। সেখানে গিয়ে তার পরিবারের সদস্যদের বলি- ইতি অসুস্থ, আপনারা তাকে বাড়িতে নিয়ে আসেন। প্রকৃতপক্ষে আমি রাগের বশে তার গলা চেপে ধরি। বুঝতে পারিনি সে মরে যাবে।’

সবশেষে গত ১৬ জানুয়ারি চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মোহাম্মদ জামাল হোসেন মৃত্যুর কারণ নির্ণয়ের জন্য কবর থেকে নিহত মেহজাবিন সুলতানা ইতির লাশ উত্তোলন করে পুনরায় ময়না তদন্তের নির্দেশ দেন।

এই বিভাগের আরও খবর